জমির পরিমাপ করার নিয়ম

জমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। বিভিন্ন সময়ে আমাদের জমির হিসাব ঠিক রাখার জন্য জমি পরিমাপের প্রয়োজন হয়। এই লেখাটিতে আলোচনা করা হবে জমির পরিমাপ করার নিয়ম এবং কি কি পদ্ধতিতে আপনারা জমি পরিমাপ করতে পারবেন।

কয়েকটি উপায়ে অবলম্বন করে আপনারা জমির পরিমাণ হিসাব কিংবা ক্যালকুলেশন করতে পারেন। বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে, আপনারা চাইলে একটি অ্যাপস ডাউনলোড করে সঠিকভাবে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ দিয়ে জমির পরিমান বের করতে পারবেন।

জমি পরিমাপের পরিমাপক গুলো কি কি?

বর্তমানে বাংলাদেশে জমি পরিমাপের জন্য ৪টি পরিমাপক বেশি ব্যবহার করা হয়। আমরা মূলত এই সকল পরিমাপক গুলোর মাধ্যমে আমাদের জমির সীমা প্রকাশ করে থাকি। এই সকল পরিমাপক গুলোর সাথে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত আছি, পুরো বাংলাদেশ জুড়ে এই পরিমাপক গুলো ব্যবহার হয়।

  1. শতাংশ বা শতক
  2. কাঠা
  3. বিঘা
  4. একর

জমির পরিমাপ করার নিয়ম

জমি পরিমাপ করার জন্য প্রথমে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বের করে নিবেন। এরপরে Google Play Store থেকে “জমি পরিমাপ ক্যালকুলেটর” অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন। এরপরে এই অ্যাপের সাহায্যে খুব সহজেই আপনার জমির সঠিক পরিমাপ বের করতে পারবেন।

অনলাইন পদ্ধতির সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, তার আগে আমাদের জেনে নেয়া প্রয়োজন জমি পরিমাপের পরিমাপক গুলো কি কি? এবং জমি পরিমাপের জন্য কি কি প্রয়োজন। জমি পরিমাপের জন্য আপনাদের একটি সূত্র প্রয়োগ করতে হবে।

জমির পরিমাপ বের করার সূত্রটি হলঃ

  1. প্রথমে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কতটুকু তা জেনে নিন।
  2. যদি জমির চারদিক সমান না হয় এক্ষেত্রে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের গড় হিসাব বের করতে হবে।
  3. এরপরে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থকে গুণ করতে হবে।
  4. তারপরে প্রাপ্ত গুণফলকে ৪৩৫.৬ দিয়ে ভাগ করবেন।

এখান থেকে আপনারা যেই উত্তরটি পাবেন এটি হলো আপনার জমির মোট শতাংশের পরিমাপ। এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই আপনারা জমির পরিমাপ করতে পারবেন। এছাড়াও আরো কয়েকটি জমি পরিমাপ করার পদ্ধতি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

মোবাইল অ্যাপ দিয়ে জমি পরিমাপ নির্ণয়

অনলাইনের মাধ্যমে যদি খুব সহজেই আপনি জমি পরিমাপ করতে চান তাহলে একটি অ্যাপস প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করতে হবে। এটি একটি জমি পরিমাপ ক্যালকুলেটর, এই ক্যালকুলেটরের সাহায্যে খুব সহজেই আপনারা জমির দৈর্ঘ্য প্রস্থ দিয়ে জমির পরিমান বের করতে পারবেন।

অ্যাপসটি ডাউনলোড এর জন্য গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে “জমি পরিমাপ ক্যালকুলেটর” লিখে সার্চ করুন। অথবা এপসের নাম লেখার উপরে ক্লিক করে সরাসরি গুগল প্লেস্টোর থেকে এটি ডাউনলোড করতে পারেন।

একটি ইনস্টল হয়ে গেলে প্রথমে অ্যাপস এর মধ্যে প্রবেশ করুন। এরপরে জমি পরিমাপের জন্য “জমি পরিমাপ ক্যালকুলেটর” লেখার উপরে ক্লিক করুন। এখানে আপনারা জমির ক্যাটাগরি অনুযায়ী পরিমাপের ক্যালকুলেটর দেখতে পাবেন।

  • আয়তাকার জমি
  • বর্গাকার জমি
  • ট্রাপিজিয়াম আকৃতির জমি
  • সমকোণী ত্রিভূজাকার জমি
  • ত্রিভূজাকার জমি
  • বৃত্তাকার জমি
  • অর্ধ বৃত্তাকার জমি

এই ক্যালকুলেটর অপশন গুলো দেখতে পাবেন, এখান থেকে আপনার জমির কোয়ালিটি অনুযায়ী পরিমাপ ক্যালকুলেটর সিলেক্ট করুন। এরপরে অ্যাপস এর মধ্যে জমি পরিমাপের জন্য কি কি প্রয়োজন হবে তা দেখতে পাবেন।

জমির পরিমাপ করার নিয়ম

এই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অনুযায়ী জমির পরিমান নির্ণয় করতে পারবেন। যদি আপনি খুব সহজেই জমির পরিমাপ করতে চান তাহলে অনলাইনের এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও এই অ্যাপসের মধ্যে জমি পরিমাপ করার আরো কয়েকটি পদ্ধতির সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

শিকল দিয়ে জমির পরিমাপ পদ্ধতি

আমাদের দেশের শিকল দিয়ে জমি পরিমাপ পদ্ধতি অনেক জনপ্রিয়। ফরাসি বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই পদ্ধতিতে ভূমি পরিমাপের জন্য এক ধরনের ইস্পাত দ্বারা তৈরি শিকল ব্যবহার করা হয়। যার ফলে এই শিকলের নাম রাখা হয় গান্টার শিকল।

গান্টার শিকল দিয়ে খুব সহজ পদ্ধতিতে সঠিকভাবে জমি পরিমাপ করতে পারবেন। মাইলস্টোন বসানোর জন্য অথবা একর ও শতকে ভূমি পরিমাপ করার জন্য এই শিকল পদ্ধতি অনেক উপযোগী। সাধারণত এই শিকলের দৈর্ঘ্য হয় ৬৬ ফুট।

সহজে ভূমি পরিমাপের জন্য গান্টার শিকলকে সর্বমোট ১০০ ভাগ করা হয়। প্রতিটি লিঙ্ক ৭.৯২ ইঞ্চি। গান্টার শিকলে ৭৯.২ ইঞ্চি তথা ১০ লিঙ্ক হওয়ার পরে নস বা ফুলি স্থাপন করা হয়।

প্রথমে গান্টার শিকল দিয়ে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মেপে নিবেন, এরপরে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গুণ করুন। কোন জমির দৈর্ঘ্য ১০০ লিঙ্ক বা ১ শিকল হলে এবং প্রস্থ ১০ লিঙ্ক সমান ১০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ শতক হবে। এবং কোন জমির দৈর্ঘ্য ১০ শিকল ও প্রস্থ ১ শিকল = ১০ বর্গ শিকল = ১ একর।

এই শিকল পদ্ধতির ভাগ গুলোকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হলেও, এর প্রতিটি নামের নির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে। যেমনঃ

  • প্রতি ১ লিঙ্ক = ৭.৯২ ইঞ্চি
  • গান্টার শিকলে ১০ লিঙ্ক বা ৭৯.২ ইঞ্চি
  • ২০ লিঙ্ক বা ১৫৮.৪ ইঞ্চি
  • ৩০ লিঙ্ক বা ২৩৭.৩ ইঞ্চি
  • ১০০ লিঙ্ক = ৬৬ ফুট
  • ১০০ লিঙ্ক = ১ গান্টার শিকল
  • ১০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ শতক
  • ১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ একর

গুনিয়া স্কেলে জমির পরিমাপ পদ্ধতি

এই স্কেল ২ ইঞ্চি পরিমাপের হয়, যা বিভিন্ন কালারের হয়ে থাকে। এই স্কেলের একপাশে ছোট ১০০ দাগকাটা থাকে এবং অপর পাশে ৫০ টি বড় দাগ কাটা থাকে। ১ ইঞ্চিতে ছোট ৫০ টি দাগ থাকে এবং বড় ১ ইঞ্চিতে ২৫ টি দাগ থাকে।

গুনিয়া স্কেলের সাহায্যে জমি পরিমাপের সময় প্রথমে সিওর হতে হবে মৌজার নকশা কত স্কেলে প্রস্তুত করা। মৌজার নকশা কত স্কেলে প্রস্তুত করা তা আপনারা মৌজার নকশায় বড় অক্ষরে লেখা দেখতে পাবেন।

জমি সঠিকভাবে পরিমাপ করার জন্য মৌজা ম্যাপে থাকা জমির নকশাকে কয়েকটি ত্রিভুজ এবং চতুর্ভুজ আকারে ভাগ করে নিয়ে গুনিয়া স্কেল ও কম্পাস ব্যবহার করে মেপে নিতে হবে। এরপরে উপরে উল্লেখিত মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করে,

জমির প্রত্যেকটি সাইডের মাপ জমি পরিমাপ ক্যালকুলেটরে বসিয়ে “ফলাফল” বাটনে ক্লিক করলে আপনি যেকোনো আকৃতির জমির পরিমাপ করতে পারবেন। গুনিয়া স্কেলের মাধ্যমে জমি পরিমাপের জন্য নিচের তথ্যগুলো অবশ্যই জানা থাকতে হবে।

  • ১ শতাংশ = ৪৩৫.৬ বর্গফুট
  • ১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট
  • ১ বিঘা = ১৪৪০০ বর্গফুট
  • ১ একর = ৪৩৫৬০ বর্গফুট
  • ১ বর্গমিটার = ১০.৭৬ বর্গফুট
  • ১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ
  • ১ কাঠা = ১৬৫ অযুতাংশ
  • ১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ
  • ১ একর = ১০০ শতাংশ
  • ১ কিলোমিটার = ১০০০ মিটার
  • ১ কিলোমিটার = ০.৬২ মাইল
  • ১ মিটার = ১০০ সেন্টিমিটার
  • ১ মাইল = ১.৬ কিলোমিটার
  • ১ ফুট = ১২ ইঞ্চি

আমাদের দেশে সরকারিভাবে সাধারণত জমির হিসেব বিঘা, কাঠা, এককে প্রকাশ করা হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাচ্চা কানি ও সাই কানি হিসেবে পরিমাপ করা হয়। কাচ্চা কানি বলা হয় প্রায় ৪০ শতাংশ জমিকে, এবং সাই কানি বলা হয় প্রায় ১৬০ শতাংশ জমিকে।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, এই লেখাটিতে আপনারা জমির পরিমাপ করার নিয়ম সম্পর্কে জেনেছেন। বর্তমানে এই পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের জমির পরিমান নির্ণয় করা হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *