জমি কেনার আগে করণীয় গুলো জানুন : জমি ক্রয়ের নিয়মাবলী

জীবন ও জীবিকা ধারণ ও নিবারণ করার জন্য জমির দরকার আছে। আর দরকারি ক্ষেত্রে যখন আপনি কোন জমি ক্রয় করতে যাবেন সেক্ষেত্রে জমি কেনার আগে করণীয় গুলো অবশ্যই আপনার জানা উচিত। জমি ক্রয় করার সময় কয়টি বিষয় বিবেচনা করতে হয় এবং কি কি জানুন। 

আজকাল অনেকেই জমির ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হন। এবং জমিতে এবং জমি ক্রয় বিক্রয়জনিত বিভিন্ন কারণে মামলা মোকদ্দমা শিকার হতে হয়। এবং একই সাথে আপনার জমিত যায় ই  বরং এর সাথে টাকাও যায় বিনিময়ে শুধু ঝামেলা পোহাতে হয়।  এজন্য জমি ক্রয়ের পূর্বে অবশ্যই জমি সম্পর্কে সঠিক অনুসন্ধান এবং তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন।

জমি কেনার আগে করণীয়

জমি কেনার আগে ক্রেতার করণীয় গুলো যদি আপনার জানা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি জমি কিনে ঠকবেন না।

জমি কেনার আগে করণীয়

জমির ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া

আপনি যে জমি ক্রয় করতে চান প্রথমে জমিটি সরেজমিনে গিয়ে দেখতে হবে। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন জমিটি আসলে কেমন। আদৌ ভাল জমি নাকি ডোবা-নালা-পুকুর। জমির মালিক বা এলাকাবাসীর নিকট হতে জমির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে হবে। এরাই আপনাকে জমির বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারবে।

জমির কাগজপত্র অনুসন্ধান ও যাচাই

জমি ক্রয়ের পূর্বে অবশ্যই জমির মালিকানা যাচাই করে নিবেন। জমির মালিকের কাছ থেকে জমি সংক্রান্ত সব কাগজপত্রের ফটোকপি যেমন: সিএস, আরএস/বিএস বা ঢাকা সিটি জরিপের খতিয়ানসহ সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এরপরে নিজ দায়িত্বে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে নিবেন।

নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই আপনাকে দেখে নিতে হবে-

  • জরিপের মাধ্যমে প্রণীত রেকর্ড অর্থাৎ খতিয়ান ও নকশা যাচাই করতে হবে।
  • জমির তফসিল অর্থাৎ জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর উক্ত দাগে জমির মোট পরিমাণ জানতে হবে।
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস পর্চা দেখতে হবে।
  • বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে ভূমির মালিক হয়ে থাকলে তার ক্রয় দলিল বা ভায়া দলিল রেকর্ডের সঙ্গে মিল করে বিক্রেতার মালিকানা নিশ্চিত হতে হবে।
  • বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ান বিক্রেতা বা তিনি যার মাধ্যমে প্রাপ্ত তার নামে অস্তিত্ব (যোগসূত্র) মিলিয়ে দেখতে হবে।
  • জরিপ চলমান এলাকায় বিক্রেতার কাছে রক্ষিত মাঠ পর্চা যাচাই করে দেখতে হবে।
  • বিক্রেতার কাছ থেকে সংগৃহীত দলিল সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস/জেলা রেজিস্ট্রার রেকর্ড রুম হতে যাচাই করে দেখতে হবে।
  • খতিয়ান/পর্চা/মৌজা ম্যাপ ইত্যাদি কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস/উপজেলা ভূমি অফিস/জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম হতে যাচাই করে দেখতে হবে। এগুলো অনলাইনে যাচাই করার জন্য ভিজিট করতে হবে land.gov.bd
  • হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ আছে কি না দেখতে হবে।
  • এসি (ল্যান্ড) অফিস থেকে পূর্ব মালিকের অর্থাৎ বিক্রেতার নামে মিউটেশনের কাগজপত্র (মিউটেশন পড়চা, ডিসিআর) সঠিক আছে কি না তা যাচাই করে নিতে হবে। যে জমিটি কিনতে চাচ্ছেন তাবিক্রেতার নামে অবশ্যই মিউটেশন করা থাকতে হবে। বিক্রেতার নামে মিউটেশন না থাকলে জমি রেজিস্ট্রেশন হবে না।

আপনার জন্য প্রয়োজনীয়-

  1. অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান
  2. নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই

জমির দখল যাচাই

আপনি যে জমি ক্রয় করতে আগ্রহী উক্ত জমির মালিকের কি প্রস্তাবিত জমি দখলে রয়েছে কিনা অর্থাৎ জমির মালিকের জমি দখল করে ভোগ করে কিনা এটি আপনাকে যাচাই করে নিতে হবে।

জমির মালিকের যদি জমি দখলে না থাকে অন্যজনের কাছে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে উক্ত জমি ক্রয় না করায় উত্তম।

ওয়ারিশি জমি কিনতে চাইলে, ঐ সম্পত্তিতে মোট কতজন ওয়ারিশ আছে তা খোজ নিয়ে দেখুন। আপনি যে ওয়ারিশের নিকট থেকে কিনবেন, তার ততটুকু বিক্রয়ের অধিকার আছে কিনা যাচাই করুন।

আইনগত বিষয় অনুসন্ধান

  • প্রস্তাবিত জমি বা সম্পত্তিটি খাস কিংবা সরকারী কিনা যাচাই করুন। সরকারী বা খাস সম্পত্তি বিধিবহির্ভূত ভাবে ক্রয়-বিক্রয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
  • অন্য কোন পক্ষের সাথে বিক্রয় চুক্তি বা বায়না পত্র রেজিস্ট্রি করা আছে কি না তা যাচাই করুন।
  • ব্যাংক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়বদ্ধ কি না তা যাচাই করুন।
  • জমি বিক্রয়ের জন্য অ্যাটর্নি নিয়োগ করা আছে কিনা তা যাচাই করুন। অ্যাটর্নি নিয়োগ করা থাকলে অ্যাটর্নি ছাড়া মূল মালিকের সম্পাদন গ্রহণযোগ্য নয়।
  • জমি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা চলছে কিনা যাচাই করুন। মামলাভুক্ত জমি কেনা উচিত নয়।

জমি ক্রয়ে দালাল এড়িয়ে চলুন

জমি কেনার ক্ষেত্রে সরাসরি জমির প্রকৃত মালিকের সাথেই আলোচনা করা উচিৎ। মধ্যস্বত্ত্বভোগী বা দালালের মাধ্যমে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের আলোচনা যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া ভাল। এতে যেমন জমির নিষ্কন্টকতার বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন, তেমনি দাম-দরের ক্ষেত্রেও প্রতারণার শিকার হতে পারেন। মনে রাখবেন, জমি কেনার সময় কখনই তাড়াহুড়ো করবেন না। কমদামে কেনার আকর্ষণে ভালভাবে যাচাই না করে জমি কিনতে গিয়ে সর্বসান্ত হয়ে যেতে পারেন।

তথ্য সুত্রঃ

  • সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়, কুমারখালী, কুষ্টিয়া
  • উপজেলা ভূমি অফিস, কক্সবাজার সদর

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *