জমি খারিজ করার পদ্ধতি গুলো জানুন

আপনি যদি একজন জমির ক্রেতা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি যার জমি ক্রয় করবেন উক্ত বিক্রেতার থেকে আপনার চাহিত জমি খারিজ করে নিতে হবে, আর অন্যদিকে আপনি যদি জমি বিক্রেতা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ক্রেতার নিকট জমি খারিজ করতে হবে। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়কেই জমি খারিজ করার পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে জানা উচিত, আর আজকে আমরা এটি সম্পর্কে আলোচনা করব।

জমি খারিজ কি?

জমি খারিজ পদ্ধতি এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন জমির মালিক তার জমি অন্য ব্যক্তির কাছে  নির্দিষ্ট কিছুর বিনিময়ে হস্তান্তর করেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন মালিক জমির মালিকানা অর্জন করেন, এবং পুরাতন মালিক তার জমির মালিকানা নতুন মালিকের কাছে হস্তান্তর করেন।

সাধারণভাবে আপনার যদি অবশিষ্ট কোন জমি থাকে কিংবা কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে আপনার জমি বিক্রি করার দরকার হয় তাহলে অবশ্যই নির্দিষ্ট নিয়ম মোতাবেক আপনাকে আপনার জমি ক্রেতার নিকট খারিজ করতে হবে। আর জমি খারিজ করার জন্য অবশ্যই খারিজ করার পদ্ধতি গুলো সঠিকভাবে জানতে হবে, আপনি যদি নিজে পদ্ধতি গুলো না জানেন তাহলে দালালের খপ্পরে পড়ে আপনাকে আপনার জমিগুলো হারাতে হতে পারে।

আপনি যদি জমির ক্রেতা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জেনে নেওয়া উচিত জমি ক্রয় করার পূর্বে করণীয়গুলো।

জমি খারিজ করার পদ্ধতি গুলো-

আপনি যদি আপনার জমিগুলো খারিজ করতে চান, অর্থাৎ আপনার জমির মালিকানা হস্তান্তর করতে চান তাহলে নিম্নলিখিত পদ্ধতি গুলো আপনাকে অনুসরণ করতে হবে, প্রত্যেকটি ধাপই এক একটি আইনি প্রক্রিয়া।

#১- জমির নতুন দলিল তৈরি করুন

জমির বর্তমান মালিক এবং আগ্রহী ক্রেতার মধ্যে একটি নতুন দলিল তৈরি করতে হবে। এই দলিলটি অবশ্যই ভূমি মন্ত্রণালয়ের যে কোন রেজিস্টার কার্যালয়ে গিয়ে করলেই হবে।  উক্ত দলিলে জমির বিবরণ  যেমন জমির পরিমাণ, জমির অবস্থান, বিক্রয়কৃত দাম, পরিশোধের শর্তাবলী এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, দলিলটি অবশ্যই নোটারি পাবলিকের সামনে স্বাক্ষর যুক্ত হতে হবে।

#২- ই নামজারি আবেদন করুন

জমি খারিজ করার জন্য অবশ্যই ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিকট জমির নামজারি আবেদন করতে হবে, বর্তমানে সকল নামজারি আবেদনগুলো অনলাইন এর মাধ্যমে করা যায়, যেটা হলো ই নামজারি। বর্তমানে ই নামজারি আবেদন করা যায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট mutation.land.gov.bd ভিজিট করে একটি একাউন্ট করার মাধ্যমে।

নামজারি আবেদন করার সময় অবশ্যই কয়েকটি বিষয় আপনাকে আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে,

  1. দলিলের একটি কপি,
  2. জমির বর্তমান মালিক এবং আগ্রহী ক্রেতার পরিচয়
  3. অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

আপনার আবেদনটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে কয়েকদিনের মধ্যে আপনাকে শুনানি জন্য ডাকা হবে, আপনার আবেদনটি আপনি ট্র্যাক করতে পারবেন, এবং জানতে পারবেন আপনার ই নামজারি আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা।

#৩- নামজারি শুনানি তে অংশগ্রহন করুন

আপনি যখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিকট নামজারির আবেদন করবেন তখন আপনাকে সেখানে শুনানিতে ডাকা হবে, এখানে অবশ্যই ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে উভয়কেই ডাকা হবে, এবং জমি সংক্রান্ত এবং তাদের দাবি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করা হবে।

#৪- নামজারির আদেশ জারি ও মালিকানা পরিবর্তন

ভূমন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত জাজ কিংবা কর্মকর্তাগণ শুনানির পর একটি নামজারির আদেশ জারি করবেন। এই আদেশের মাধ্যমে নতুন মালিক জমির মালিকানা অর্জন করেন। এবং পুরাতন মালিক তার জমির মালিকানা হস্তান্তর করবেন।

এই চারটি ধাপের মাধ্যমেই জমির মালিকানা হস্তান্তর কিংবা জমি খারিজ করা সম্ভব।

জমি খারিজ করতে যে সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দরকার হয়

  1. জমির ক্রেতা এবং বিক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্র
  2. ক্রেতা এবং বিক্রেতার  ছবি
  3. উভয়ের  স্বাক্ষর
  4. নতুন দলিলের কপি
  5. সর্বশেষ হালনাগাদকৃত জমির খতিয়ান
  6. ওয়ারিশ সনদ

জমি খারিজ করার প্রয়োজনীয় ফি আছে কিনা?

জমি খারিজ করার জন্য অবশ্যই নির্ধারিত আবেদন ফি দিতে হবে । আবেদন কি কত হবে সেটা জমির পরিমাণ  এবং এলাকার উপর নির্ভর করবে। যেমন দলিল করতে আপনার খরচ হতে পারে, নামজারি আবেদন করতে খরচ হতে পারে, শুনানির সময় আপনার টাকা খরচ হতে পারে, এছাড়া আপনি যদি কোন দ্বিতীয় পক্ষের মাধ্যমে আপনার জমিটি খারিজ করতে চান সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *