আবেদন পত্র লেখার নিয়ম ( নমুনা সহ )

আবেদন পত্র লেখার নিয়ম : বর্তমান সময়ে আবেদনপত্র লেখার প্রয়োজনীয়তা  অনেকাংশেই কমে গেলেও আমাদের বিভিন্ন জায়গায়ই আবেদন পত্র লিখে দরখাস্ত করতে হয়। আমাদের এই সহজ বিষয়টি অনেক সময় জানা থাকলেও মাঝে মাঝেই ভুল করে থাকি। আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা আবেদন পত্র লেখার নিয়ম বা দরখাস্ত লেখার নিয়ম সম্পূর্ন ধারনা দিবো।

আবেদন পত্র / দরখাস্ত কি

এই বিষয়টি সকলেরই মোটামুটি জানা । আবেদন পত্র , দরখাস্ত , Application শব্দ তিনটি ধারনার প্রকাশ করে। আমাদের বাসায় যখন কোন কিছু প্রয়োজন হয় তখন আমরা মুখে বলে চাই  যেটা মৌখিক আবেদন ।এক্ষেত্রে কোন নিয়ম কানুন মানতে হয় না । কিন্তু যখন আমরা অফিশিয়ালি কোন কিছু চাইতে চাই তখন এটাকে নথি আকারে লিখিতভাবে পেশ করতে হয়। আর এটিই আবেদনপত্র বা দরখাস্ত বা Application।

আবেদন পত্র প্রয়োজনীয়তা

আবেদন লেখার প্রয়োজনীয়তার কথা  আসলেই মনে হয় বাংলা ২য় পত্রের কথা কারণ প্রায় প্রতিটি শ্রেনির বাংলা ২য় পত্রে আবেদন বিষয়টি রয়েছে। এছাড়াও অফিস ,আদালত ,চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আবেদন বা দরখাস্ত লিখতে হয়। হোক সেটা কাগজে বা ইলেকট্রনিক উপায়ে।

আবেদনপত্র বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন অভিযোগ পত্র ,প্রত্যয়ন পত্র, দরখাস্ত । এক কথায় বলতে গেলে নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অনুরোধই আবেদনপত্র। যেনে নেয়া যাক আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

আবেদন পত্র লেখার নিয়ম । দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলি

বাড়িতে যখন আমরা কোনো  জিনিশের জন্য আবদার করে থাকি এটা যদি যুক্তিযুক্ত হয় এবং উপস্থাপন ভালো হয় তাহলে আমরা খুব সহজেই আমাদের পছন্দের জিনিসটি পেয়ে যাই। ঠিক তেমনি আবেদনের ভাষা যদি মার্জিত এবং  বিষয়বস্তু যুক্তিযুক্ত হয় তাহলেই আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হবে।

  • সাধারণত আবেদন লেখার জন্য A4 সাইজের কাগজ হলে ভালো হয়।
  • আবেদন লেখার জন্য বামপাশে ০.৫” উপরে ১”  মার্জিন রাখলে ভালো হবে।
  • প্রথমে যেদিন আবেদন করবে সেই তারিখ লিখতে হবে।
  • বরাবর লিখে শুরু করতে হবে
  • এরপর আবেদনএর  প্রাপকের নাম  পদবী ঠিকানা লিখতে হবে।
  • পঞ্চম ধাপে আবেদনের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হবে। কারন একটি আবেদনপত্রের মূল বিষয়।
  • বিষয়ে লেখার পর তাকে সম্বোধন করতে হবে। সাধারণত জনাব/ জনাবা/ স্যার  ইত্যাদিতে সম্বোধন করে লেখা হয়। বাংলা আবেদনের জন্য জনাব এবং ইংরেজিতে লেখার জন্য সার হিসেবে সম্বোধন করায় অধিকতর শ্রেয়।
  •  এরপর সম্মানের সহিত আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান সাথে আপনার কি রকম সম্পর্ক সেটা উল্লেখ করে আবেদন এর মূল বিষয় কারন সহ  লিখবেন।
  • আবার সম্মানের সহিত লেখা শেষ করবেন।
  •  এরপর বিনীত নিবেদক লিখে আবেদনকারী অর্থাৎ আপনার নাম, ঠিকানা  লিখে সমাপ্ত করবেন।
  •  লেখা শেষ হলে সম্পূর্ণ আবেদনটি আবার চেক করে নিবেন। তারপর একটা খামে ভরে প্রাপকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিবেন।

জানুনঃ প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম

একটি আদর্শ আবেদন পত্রের নমুনা । দরখাস্ত লেখার নমুনা

তারিখঃ( যে  তারিখ আবেদন করবেন সেই তারিখ)

বরাবর,

প্রধান শিক্ষক/ (যার কাছে লিখবেন তার পদবী)

ফুলকুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় / (প্রতিষ্ঠান নাম)

নওগাঁ সদর  (প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা)

বিষয়ঃ( যে বিষয়ে সমস্যা সেটা বলবেন।)

জনাব,

সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, (এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে আপনার প্রয়োজনীয় কথা উল্লেখ করবেন)………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….।

এতএব ,জনাবের নিকট আকুল আবেদন এই যে,(আবেদনের বিষয়) যাতে উক্ত ছুটি পেতে পারি তা মঞ্জুর করে বাধিত করবেন।

বিনীত

আপনার নিয়মিত ছাত্র/কর্মী

(আপনার নাম)

শ্রেণীঃ / (চাকুরীজীবি হলে পদের নাম)

রোল-

 

উপবৃত্তির জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

 

বরাবর                                                                         তারিখঃ ১০/০১/২০২২

প্রধান শিক্ষক

নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

মাইজদী, নোয়াখালী

বিষয়ঃ উপবৃত্তির জন্য আবেদন

জনাব,

   সবিনয় নিবেদন এই যে,  আমি আপনার বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনির একজন নিয়মিত ছাত্রী।  আমার বাবা অত্যন্ত গরীব একজন কৃষক। তিনি আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি। গত কয়েকমাস যাবৎ তিনি ভীষন অসুস্থ। ফলশ্রুতিতে আমার বাবার উপার্জন করার তেমন সামর্থ্য নেই, এমতাবস্থায় আমার বাবার পক্ষে পরিবারের খরচ বহনের পর আমাদের ৪ ভাই বোনের পড়ালেখার খরছ চালানো খুবিই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। 

অতএব জনাবের নিকট আকুল আবেদন এই যে, উপরোক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে আমার পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দান করে চিরকৃতজ্ঞ করবেন।

বিনীত নিবেদক,

আপনার অনুগত ছাত্রী মাইশা 

শ্রেনি ৯ম, রোল ১

 

অনুদানের জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

 

বরাবর                                                          তারিখঃ ১০/০১/২০২২

মাননীয় সংসদ সদস্য 

নোয়াখালী-৩ 

বেগম গঞ্জ, নোয়াখলাী।

বিষয়ঃ অনুদানের জন্য আবেদন, আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে আবেদন

জনাব,

    সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আবেদন কারী বেগমগঞ্জ উপজেলাধীন ১০ নং নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডেও একজন অত্যন্ত গরীব একজন কৃষক । বিগত দিনে দ্রব্যমুল্যের দামের উর্ধগতির কারনে আমার পক্ষে আমার পরীবারের নিত্যপ্রযোজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করার সামর্থ্য নেই। উনুনে আগুন নেই। ঘরে চাল নেই,  না খেয়ে দিন পার করতে হয়। পরিবার পরিজন নিয়ে বহু কষ্টে জীবন যাপন করছি।

অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন এই যে দয়া করে উক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে আর্থিক অনুদান প্রদান করে আমার পরিবারের দূরাবস্থা দূর করতে সহায়তা করবেন৷ আমি আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।

নিবেদক,

শাহজাহান খান, 

মোবাইলঃ ০১৯********

 

ভর্তির জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

 

বরাবর                                                                        তারিখঃ ১০/০১/২০২২

প্রধান শিক্ষক,

ঝালকাঠি সরকারি কলেজ

ঝালকাঠি, বরিশাল। 

বিষয়ঃ ভর্তির জন্য আবেদন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য আবেদন

জনাব,

 সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমি গোপালগঞ্জ সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজের একাদশ শ্রেনির  ব্যাবসায় শিক্ষার একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার বাবা একজন সরকারি চাকুরিজীবী৷ তিনি চাকরির প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে গোপালগঞ্জে থাকেন, সেই সুবাদে আমি গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ পড়েছি৷  কিন্তু হঠাৎ আমার বাবার চাকরির ট্রান্সফার হওয়ায় আমাকে আমার পরিবার সহ ঝালকাঠি আসতে হয়েছে। তাই আমি এখন আপনার প্রতিষ্ঠানে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট সনদের প্রেক্ষিতে ভর্তি হইতে ইচ্ছুক। এমতাবস্থায় যদি আমাকে আপনার প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অনুমতি প্রদান করেন তাহলে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে হাজির হইবো

অতএব জনাবের নিকট আকুল আবেদন এই যে,আমাকে আপনার প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অনুমতি দিয়ে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিবেন।

নিবেক

হুসাইন আহমেদ 

একাদশ শ্রেনি ( ব্যাবসায় শিক্ষা শাখা) 

 

বেতন বা ফি মওকুফ চেয়ে আবেদন পত্র । বিনা বেতনে অধ্যয়নের জন্য আবেদন

তারিখঃ 

বরাবর 

প্রধান শিক্ষক

অমৃত লাল দে কলেজ

হাসপাতাল রোড, বরিশাল।

বিষয়ঃ বেতন/ফিস মওকুফ করার জন্য আবেদন অথবা বিনা বেতনে অধ্যয়নের জন্য আবেদন

জনাব,

বিনীত নিবেন এই যে, আমি আপনার অত্র প্রতিষ্ঠানের একজন নিয়মিত ছাত্র/ছাত্রী।  আমি গত বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে নবম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ আমার পরিবারের একমাত্র কার্যক্ষম ব্যাক্তি আমার বাবা। এই করোনাকালীন সময়ে তার স্বল্প আয় আরো নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। পরিবারের খরছ চালানোর পরে আমাদের ৩ ভাউ বোনের পড়াশোনার খরছ চালানো টাও তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছে৷ এমতাবস্থায় পরীক্ষার ফি/ ফর্ম ফিল আপের ফি / বেতন আংশিক মওকুফ করলে আমার পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

অতএব,  জনাবের নিকট আকুল আবেদন এই যে, আমার বিষয়টি গভীর সহানুভূতির সাথে খতিয়ে দেখতে আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। 

নিবেদক,

নামঃ মাসুম/মাসুমা

শ্রেনি ১০ম 

রোল ০১

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *