অনেক বছরের কষ্টের ফল সার্টিফিকেট, যদি এই সার্টিফিকেটে ভুল থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের কি করনীয়? এ ধরনের প্রশ্ন হর-হামেশে পাওয়া যায়। এই লেখাটিতে আলোচনা করা হবে এসএসসি/ এইচএসসি সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
প্রত্যেকটি নাগরিকের জীবনে তার এডুকেশনাল সার্টিফিকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাকরির ক্ষেত্রে কিংবা বিদেশ গমন অথবা বিভিন্ন কাজে সার্টিফিকেট প্রয়োজন। আমাদের এই সার্টিফিকেটের তথ্যে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে ভোগান্তির শেষ নেই। আপনারা চাইলে উক্ত সার্টিফিকেট থেকে ভুলগুলো সংশোধন করতে পারবেন অনলাইনের মাধ্যমে।
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম
সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য সংশোধন ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংযুক্ত করতে হবে। এর পরে সংশোধন ফি ৫৫৮ টাকা সোনালি সেবার মাধ্যমে ব্যাংক ড্রাফট করে শিক্ষা বোর্ড বরাবর আবেদন করতে হবে।
সার্টিফিকেট সংশোধন অফলাইন এবং অনলাইনে দুই ধরনের করা যায়। দালালের ঝামেলায় এরাতে অনলাইনে আবেদন করা শ্রেয়। অফলাইনে আবেদন করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সশরীরে গিয়ে বোর্ডে উপস্থিত হতে হবে এবং আবেদন দাখিল করতে হবে।
অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য নিজস্ব শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে online application করতে হবে। এর জন্য মোবাইল নাম্বার এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ PDF ও আবেদনকারীর ছবি দিয়ে সাবমিট করতে হবে।
অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিং অথবা সোনালী ব্যাংক এর মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করুন। এরপরে আবেদনপত্র প্রিন্ট কপি এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে রাখুন। সকল তথ্য যাচাই করার পরে বোর্ড থেকে আপনাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে তখন উত্তর ডকুমেন্টগুলো সাথে নিয়ে যাবেন।
পেমেন্ট জমা দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ৭ দিনের মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিং কিংবা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে অন্যথায় আপনার আবেদনটি বাতিল হবে। এবং ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে অবশ্যই নিচে উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলোর সাথে করে নিয়ে যাবেন। ভেরিফিকেশন এর জন্য এগুলো প্রয়োজন হবে।
সার্টিফিকেট সংশোধন করতে কি কি লাগে
আমাদের সার্টিফিকেটগুলো সংশোধন করার আবেদনের পূর্বে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করে রাখা উচিত।
- নোটারি পাবলিক (এফিডেভিড)
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের মেইন কপি ও ফটোকপি।
- ভোটার আইডি কার্ড অরজিনাল কপি ও ফটোকপি (ভোটার আইডি কার্ড না থাকলে প্রয়োজন নেই)
- পত্রিকায় বিজ্ঞাপন কপি।
- এডুকেশন রিলেটেড সকল সার্টিফিকেট এর মেইন কপি এবং ফটোকপি।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাপ্ত এডমিট কার্ড মেইন কপি ও ফটোকপি।
- পিতা মাতার (গার্ডিয়ান) জাতীয় পরিচয় পত্রের মূল কপি ও ফটোকপি।
- এবং তাদের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের মূল কপি ও ফটোকপি।
- অনলাইনে আবেদন শেষে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি ও পেমেন্ট স্লিপ।
অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন করার আবেদন জমা দেওয়ার পরে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হবে। ইন্টারভিউতে যাওয়ার সময় অবশ্যই উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলো সঙ্গে নিয়ে যাবেন তাহলে আপনার আবেদন বাতিল হবার সম্ভাবনা থাকবে না।
প্রত্যেকটি ডকুমেন্টস এ ফটোকপি এবং মেইন কপি নিয়ে যাবেন। ফটোকপি গুলো জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে এবং মেইন কপি গুলো ভেরিফিকেশন এর জন্য সাবমিট করতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই সরাসরি উপস্থিত থাকতে হবে।
উক্ত ডকুমেন্টগুলোর বিবরণী
নোটারি পাবলিক
নোটারি পাবলিক হলো এফিডেভিট। সার্টিফিকেটের জন্ম তারিখ ও নাম সংশোধন করার জন্য রেজিস্টার্ড আইনজীবির মাধ্যমে এফিডেভিট সংগ্রহ করতে হবে।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন
এফিডেভিট সংগ্রহের পরে যেকোনো বিভাগীয় পর্যায়ের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। বিজ্ঞাপনে বর্তমান সার্টিফিকেট এর সকল তথ্য এবং উক্ত তথ্যের ভুল ও সংশোধনী তথ্য উল্লেখ করতে হবে। বিজ্ঞাপনে সার্টিফিকেটের ভুল সংশোধনী সকল বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
এডুকেশনাল রিলেটেড সার্টিফিকেট
সার্টিফিকেট সংশোধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস। মনে করেন আপনি HSC পরীক্ষার সার্টিফিকেট সংশোধন করতে চান সেক্ষেত্রে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় অবশ্যই SSC, JSC, PSC পরীক্ষার সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে যাবেন। ভেরিফিকেশন ক্ষেত্রে উক্ত ডকুমেন্টগুলো দরকার হবে।
অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন আবেদন প্রক্রিয়া
সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য পূর্বের ন্যায় এখন আর বোর্ডে গিয়ে দিনের পর দিন ঘুরতে হবে না কিংবা দালাল এর পিছনে সময় এবং টাকা নষ্ট করতে হবে না। আপনারা চাইলে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই লেখাটিতে আমরা সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
অনলাইনের মাধ্যমে সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য প্রথমে Google এ গিয়ে সার্চ করুন Educational Board (আপনার বোর্ড) প্রায় সকল বোর্ডের আবেদন প্রক্রিয়া একই ধরনের। উদাহরণঃ Educational Board Dhaka
এরপরে বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে online application খুঁজে বের করতে হবে এবং সেখানে প্রবেশ করতে হবে। যেহেতু আমরা সার্টিফিকেটের নাম এবং বয়স সংশোধন করব সেহেতু “নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য আবেদন” অপশনে ট্যাপ “আবেদন ফরম” বাটনে ক্লিক করুন।
এরপরে যথাক্রমে Exam,Year, Roll, Reg no. বসিয়ে Find বাটনে ক্লিক করুন। এখান থেকে আপনাদের সিলেক্ট করতে হবে কি কি সার্টিফিকেট এর ভুল সংশোধন করতে চান। যদি আপনারা HSC, SSC, JSC সকল সার্টিফিকেট এর ভুল সংশোধন করতে চান তাহলে সবগুলো সিলেক্ট করবেন।
বিঃ দ্রঃ সার্টিফিকেট সংশোধনের ক্ষেত্রে যদি সকল সার্টিফিকেট ভুল থাকে তাহলে একবারে সবগুলো সিলেক্ট করতে পারবেন (একজনের জন্য অনেকবার আবেদন করা যাবে না)
তাই যদি আপনার সকল সার্টিফিকেটে ভুল থাকে তাহলে সবগুলো একসাথে সংশোধন করতে পারবেন।
সার্টিফিকেট সিলেক্ট করে সংশোধনী তথ্য উল্লেখ করতে হবে এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ পিডিএফ আপলোড করতে হবে। এরপরে আবেদনকারীর ছবি ও সংশোধনী ধরন সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার সার্টিফিকেট সংশোধনী আবেদন সাবমিট হয়েছে। আবেদনের পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে অন্যথায় আবেদন বাতিল হবে। আপনারা চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অথবা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করতে পারেন।
সার্টিফিকেট সংশোধন ফি
প্রত্যেকটি বোর্ডের জন্য সার্টিফিকেট সংশোধন ফি আলাদা। ঢাকা বোর্ডের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সার্টিফিকেট সংশোধন ফি ৫৫৮ টাকা। যদি আপনারা HSC এবং SSC ২টি সার্টিফিকেট সংশোধন করতে চান তাহলে সংশোধন ফি হবে ১১১৬ টাকা। এভাবে করে সার্টিফিকেট যত বেশি হবে সংশোধন ফি তত বাড়বে।
এখানে শুধুমাত্র ঢাকা বোর্ডে হিসাব দেওয়া হয়েছে প্রত্যেকটি বোর্ডের জন্য সংশোধন ফি আলাদা।
এছাড়াও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা লাগতে পারে। এফিডেভিড খরচ ৫০০ টাকা (কম বেশি হতে পারে) পরবর্তীতে সার্টিফিকেট উত্তোলন ফি প্রত্যেকটি সার্টিফিকেট এর জন্য ৫৫৮ টাকা।
২টি সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য আনুমানিক আপনার ৪০০০-৫০০০ টাকা লাগতে পারে। অবশ্যই স্থান ভেদে আবেদন ফি, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ফি, এফিডেভিড ফি কম-বেশি হবে।
সার্টিফিকেট সংশোধন ভেরিফিকেশন ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া
অনলাইনে আবেদন সাবমিট এবং আবেদন ফি পরিশোধ করার কিছুদিন পর এসএমএস এর মাধ্যমে অথবা ফোন কলের মাধ্যমে ইন্টারভিউ তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। উক্ত তারিখে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো নিয়ে উপস্থিত হয়ে ইন্টারভিউ সম্পন্ন করবেন।
সার্টিফিকেট সংশোধনী ইন্টারভিউ এর জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন এই সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো নিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে না গেলে আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।
তাই আমি সাজেস্ট করব ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলো সঙ্গে নিয়ে যাবেন। এবং প্রত্যেকটি ডকুমেন্টস এর মেইন কপি ও ফটোকপি সাথে নিয়ে যাবেন।
সফলভাবে ইন্টারভিউ শেষ হলে বোর্ড কতৃপক্ষর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আপনার সার্টিফিকেট সংশোধন করা হবে। পরবর্তীতে এসএমএস এর মাধ্যমে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার স্থান এবং তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। আপনি নিজে উপস্থিত হয়ে নূতন সংশোধনী সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন।