আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়

একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে এ নিয়ে পরিবারের সকলেরই থাকে চিরন্তন কৌতূহল। বর্তমানে প্রচলিত আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের মাধ্যমে সন্তান ছেলে না মেয়ে জানা যায়। গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য সচেতনতায়, আল্ট্রাসনোগ্রাম কখন করা যাবে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এই আলোচনায়।

একটি শিশুর গর্ভের অবস্থান ও জেন্ডার জানার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সুরক্ষিত হলো আলট্রাসনোগ্রাম। তবে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে সন্তান ছেলে না মেয়ে তা উল্লেখ থাকেনা। তাই আলাদাভাবে আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় রয়েছে। তবে এই সমস্ত বোঝার বিষয় সম্পূর্ণ ডাক্তারদের।

মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। আর আল্লাহ কখন কাকে কিভাবে সৃষ্টি করবেন এটা একমাত্র তিনিই জানেন। আল্লাহর সৃষ্টি সব সময় সুন্দর হয়। ছেলে কিংবা মেয়ে হবে কিনা এটা সম্পূর্ণ আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন, তাই গর্ভবতী নারীদেরকে আলট্রাসনোগ্রামি করে রিপোর্ট বের করে ছেলে কিংবা মেয়ে নিশ্চিত হওয়া ঠিক না। আর তাই সাধারণ মানুষদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা গেল যে কোন রকম ভাবে আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট না বুঝে সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকাই ভালো। এই পোস্টটি শুধুমাত্র বোঝার স্বার্থে লেখা হয়েছে

আল্ট্রাসনোগ্রামকি?

আল্ট্রাসনোগ্রাম হলো একটি শব্দ তরঙ্গ ভিত্তিক ইমেজিং মেডিকেল চেকআপ। এটি শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, টিস্যু বা অন্যান্য কাঠামোর অবস্থানের ছবি তৈরি করে। ইংল্যান্ডের স্কটিশ ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ডক্টর অবস্টেট্রিসান লেন ডোনাল্ড।

দেহের অভ্যন্তরীণ স্ক্যানিং করার জন্য হাই ফ্রিকোয়েন্সী বা আল্ট্রা ফ্রিকোয়েন্সী সাউন্ড ওয়েব ব্যবহার করা হয়। মূলত এ কারণেই এতে আল্ট্রাসনোগ্রাম বলা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাম কে আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সনোগ্রাফি বা আলট্রাসাউন্ড ও বলা হয়ে থাকে।

আল্ট্রাসনোগ্রাম কখন করা যাবে?

আল্ট্রাসনোগ্রাম নানারকম রোগনির্ণয় ও গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থা জানার জন্য একটি সুরক্ষিত মেডিকেল চেকআপ হলেও আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে সঠিক সময় বিবেচনায় রাখতে হয়। সাধারণত প্রেগন্যান্সি কালীন সময় ২২ সপ্তাহ অতিক্রম করার পর ২ডিআল্ট্রাসনোগ্রাম করে বাচ্চার জেন্ডার জানা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চার অবস্থান/ গ্রোথ ভেদে এ সময়ের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় স্পষ্ট হয় না।

গর্ভাবস্থা ৩০ সপ্তাহের মতো হলে প্রায় নিশ্চিতভাবে সন্তানের জেন্ডার বুঝা যায়। এছাড়াও ৩ডি‌ আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ফলাফল আরো স্পষ্ট দেখা যায়।

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট। Ultrasonogram Pregnancy Report

আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনের মাধ্যমে হাই ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গ দ্বারা গর্ভবতী মায়ের চেকআপ করার পর একটি রিপোর্ট প্রদান করা হয়। এই রিপোর্টে গর্ভের সন্তান সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য উল্লেখিত থাকে। এসকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো হলো:-

  • Fetal Number- গর্ভের ভ্রুনের সংখ্যা নির্দেশ করা হয়। একটি সন্তানের ভ্রুন থাকলে 1/ One/ Single এবং যমজ সন্তান হলে 2/ Two/ Double উল্লেখিত থাকে।
  • Fetal Position- গর্ভাবস্থায় ভ্রুনের অবস্থান।
  • Fetal heart rate- এর দ্বারা প্রতি মিনিটে ভ্রূণের হৃদস্পন্দনের হার বুঝানো হয়।
  • Amniotic Fluid index– এর দ্বারা গর্ভের তরল সূচক নির্দেশ করা হয়, যেখানে গর্ভের ভ্রুনল ভাসমান অবস্থায় থাকে। অ্যামনিওটিক ফ্লুইড সূচক- 5 cm থেকে 25 cm এর মধ্যবর্তী হওয়া স্বাভাবিক। 5 এর কম হলে অলিগোহাইড্রামনিওস এবং 25 এর বেশি হলে পলিহাইড্রামনিওস সমস্যা হয়।
  • Placenta- প্লাসেন্টা গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে বিকাশ লাভ করা একটি অঙ্গ। এটি ক্রমবর্ধমান শিশুকে অক্সিজেন এবং পুষ্টি প্রদান করে, শিশুর রক্ত ​​থেকে বর্জ্য পদার্থও বের করে দেয়। এটি জরায়ুর প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত হয় এবং এটি থেকে শিশুর নাভির উদ্ভব হয়।
  • Fetal anatomic survey– ভ্রুনের হার্ট, ভেসেল, কিডনি, পাকস্থলী, স্পাইন- এগুলো তৈরি হয়েছে কিনা এবং এদের অবস্থা উল্লেখিত থাকে এবং এর দ্বারা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় নেই।
  • GA- Gestational Age- গর্ভাবস্থা কতটা দীর্ঘ তা জানায়। এক্ষেত্রে গর্ভধারণকারীর শেষ মাসিক চক্রের প্রথম দিন থেকে বর্তমান তারিখ পর্যন্ত হিসাব করা হয়।
  • BPD- Biparietal Diameter– ভ্রুণের পরিমাপের একটি প্যারামিটার। এটি ভ্রুণের ব্যাস নির্দেশ করে।
  • HC- Head Circumference- ভ্রুনের মাথার পরিধি কতটুকু তা নির্দেশ করে।
  • AC- Abdominal Circumference- ভ্রুনের পেটের পরিধি প্রকাশ করে।
  • FL- Femur Length– ভ্রুনের দৈর্ঘ্য কতটুকু তা জানায়।

এ সকল তথ্যগুলো একটি আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্টে অবশ্যই উল্লেখিত থাকে। এছাড়াও চিকিৎসা করার হাসপাতাল ভেদে আরো বেশ কিছু অপশন/ চিহ্ন বা প্রতীক উল্লেখিত থাকতে পারে, যা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় এবং শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে।

Ultrasonogram report
Ultrasonogram report

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়

গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের উন্নয়ন হওয়ার পর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করলেও আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় স্পষ্ট থাকেনা। টেকনোলজির এই যুগে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব সময় পর্যন্ত ১০০% নিশ্চিত হওয়া যায়না সন্তানের লিঙ্গ সম্পর্কে। এ সময় আল্ট্রাসনোগ্রাফির প্রেগন্যান্সি রিপোর্টের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়বস্তু বিবেচনা করে বাচ্চার জেন্ডার নির্ধারণ করা হয়। যেমন –

গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ – চীনের লুইয়াং শহরে ৭ বছর গর্ভবতী মহিলাদের উপর গবেষণা করে জানা যায় গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে তা বুঝার সবচেয়ে কার্যকর উপায় মায়ের রক্তচাপ। গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ কম থাকলে (140 BPM এর কম) মেয়ে সন্তান এবং রক্তচাপ বেশি থাকলে ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ভ্রুনের হার্টবিট – গর্ভের ভ্রুণটির হার্টবিট রেট মিনিটে ১৪০ স্পন্দনের বেশি হলে মেয়ে এবং কম হলে ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রিপোর্টের চিহ্ন – আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট বেশ কিছু মেশিন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে। এ সকল চিহ্নের নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে যা বাচ্চার লিঙ্গ প্রকাশ করে। যেমন-

আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে বুঝার উপায়

প্রেগন্যান্সি রিপোর্টের ডেসক্রিপশনে Gender- m/ Gender boy উল্লেখিত থাকলে।
কিছু কিছু আল্ট্রাসনোগ্রামমেশিনের রিপোর্টের নিচের অংশে একটি বৃত্তের সাথে তীর যুক্ত চিহ্ন থাকে যা জেন্ডার ছেলে নির্দেশ করে।

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট মেয়ে বুঝার উপায়

প্রেগন্যান্সি রিপোর্টের ডেসক্রিপশনে Gender- N/ Gender girl উল্লেখিত থাকলে।
আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের রিপোর্টের নিচের অংশে একটি বৃত্তের সাথে যোগ চিহ্ন যুক্ত  থাকে যা জেন্ডার মেয়ে নির্দেশ করে। এধরনের চিহ্ন থাকলে আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় স্পষ্ট হয়।

বাচ্চার জেন্ডার আলট্রাসাউন্ডে না বুঝতে পারার কারন কি

গর্ভাবস্থায় আলট্রাসাউন্ড/ আল্ট্রাসনোগ্রাম চেকআপ করানো হলে বেশ কয়েকটি কারণে বাঁচার জেন্ডার বুঝা যায়না। এগুলো হলো:-

  • ২২ সপ্তাহের পূর্বে আলট্রাসাউন্ড করানো হলে।
  • গর্ভবতী মায়ের পেটে অতিমাত্রায় ফ্যাট/চর্বি থাকলে।
  • জরায়ুতে এমনিয়টিক ফ্লুইড এর পরিমাণ কম থাকলে ক্লিয়ার ফুটেজ আসে না।
  • আলট্রাসাউন্ড করানোর সময় শিশুর দু পা চেপে রাখলে অথবা সেই স্থানে নাড় পেচিয়ে থাকলে।
  • ২ ডি আলট্রাসাউন্ড মেশিন ব্যবহার করা হলে ৩ ডি এর তুলনায় কম স্পষ্ট হয়।
  • উপরোক্ত কারণেই আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় থাকেনা।

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বুঝতে না পারলে কি করবো

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট স্পষ্টভাবে বুঝতে না পারলে গর্ভাবস্থার ৩০ সপ্তাহ পার হওয়ার পর চেকআপ করাতে হবে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে সন্তানের লিঙ্গ ধারণা করা যায়। যেমন-

  • ছেলে সন্তান হলে সকালে হালকা বমি ভাব বা অন্য সমস্যা হয়না। মেয়ে সন্তান হলে সকালে পেটে ব্যথা ও শারীরিক অসুস্থতা অনুভূত হয়।
  • পেট বেশি ভারী মনে হলে নিয়ে এবং হালকা অনুভূত হলে ছেলে হতে পারে।
  • শিশুর অবস্থান পেটের ডান দিকে মনে হলে মেয়ে এবং বাম দিকে বা পেট জুড়ে মনে হলে ছেলে হতে পারে।

ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় ছাড়াও আপনার সন্তানের লিঙ্গ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

লিখনেঃ সাজ্জাদ হোসেন { ফ্রিল্যান্স রাইটার }

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করা কি ক্ষতিকর?

আলট্রাসনোগ্রামে কোন তেজস্ক্রিয় পদার্থ/রশ্নি না থাকায় গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি করে না। আল্ট্রাসনোগ্রাম একটি শুধুমাত্র অতি উচ্চ কম্পনসম্পন্ন শব্দ তরঙ্গ, যা আমাদের সাধারণ শ্রবণ ক্ষমতার বাইরে।

আলট্রাসনোগ্রাম কতবার করা যায়?

আলট্রাসনোগ্রামে গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি করে না, তাই যতবার ইচ্ছা করা যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় ৩ বার আলট্রাসনোগ্রাম করানো উপযুক্ত। ৭/৮ তম সপ্তাহে গর্ভ সম্পর্কে জানতে, ২২-২৪ সপ্তাহে শিশুর লিঙ্গ সম্পর্কে জানতে এবং ৩০-৩৮ সপ্তাহে শিশুর দৈহিক উন্নতি সম্পর্কে জানতে।

আলট্রাসনোগ্রাম করতে কত টাকা লাগে?

সাদাকালো আলট্রাসনোগ্রাম করতে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং কালার আলট্রাসনোগ্রাম করতে ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা লাগে। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভেদে টাকা কম-বেশি লাগতে পারে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *