প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আবেদন করার পদ্ধতি
যদি আপনি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করেন অর্থাৎ নিজেকে যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন তাহলে দেখে নিন কিভাবে এই আবেদনটি করবেন এবং এই আবেদন করতে কি কি লাগবে তার বিস্তারিত জানুন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় ২০১০ সালে “প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট” গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মূলত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ও মেধাবী, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটি গঠন করা হয়। এই ট্রাস্ট এর পক্ষ থেকে ষষ্ঠ থেকে স্নাতক পর্যায়ের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হয় এমনকি বিনা বেতনে শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কাজ করা হয়ে থাকে।
আজকের এই লেখাতে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে আবেদন করার পদ্ধতি নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে। আশা করা যায়, নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি পড়ার পর উক্ত ট্রাস্টে আবেদন করার পদ্ধতি বিষয়ক আপনার সব জিজ্ঞাসার উত্তর পেয়ে যাবেন। চলুন তাহলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট কী?
যদি আপনি প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট সম্পর্কে ইতোপূর্বে না জেনে থাকেন তাহলে স্বভাবতই আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এটি আসলে কী ধরনের সংঘ। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আসলে বিভিন্ন পর্যায়ে দেশের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি সহায়তা প্রদান করে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর পক্ষ থেকে এখন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ৫০০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ৮০০০ টাকা এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ১০০০০ টাকা ভর্তি সহায়তা পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট মেধাবী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৩- ১৪ অর্থ বছরে সর্বমোট এক লক্ষ তেষট্টি হাজার ঊনআশি জন ছাত্রছাত্রীকে একানব্বই কোটি পঁয়ষট্টি লক্ষ তিন হাজার নয় শত আশি টাকা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষা খাত ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য সামাজিক সমস্যার সমাধানে এই ট্রাস্ট নিয়োজিত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আবেদন করার পদ্ধতি
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর বৃত্তি পাওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ আপনার সুবিধার জন্য নিচে বর্ণনা করা হলঃ
ভর্তি সহায়তা প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ছবি
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
- স্বাক্ষর
- অভিভাবকের জাতীয় পরিচয় পত্র
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়ন বা সুপারিশ পত্র
অভিভাবকের কর্মরত প্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশ পত্র যা ৩য় ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য
ধাপ-১ঃ সুপারিশ গ্রহণ
প্রথমে আপনাকে http://www.eservice.pmeat.gov.bd/admission/ সাইটে প্রবেশ করতে হবে। তারপর নির্ধারিত প্রত্যয়ন বা সুপারিশ ফর্ম ডাউনলোড করতে হবে। এরপর ফর্মটি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। সবশেষে আপনার প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে।
ধাপ-২ঃ রেজিষ্ট্রেশন বা নিবন্ধন
প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়ে গেলে আপনাকে সেগুলোর স্পষ্ট করে ছবি তুলতে হবে। তারপর রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে যদি পূর্ববর্তী একাউন্ট না থেকে থাকে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর অফিশিয়াল ওয়েব সাইট pmet account registration ভিজিট করে “রেজিষ্ট্রেশন” অপশনে চাপ দিন।

তারপর একটি নিবন্ধন ফর্ম পাবেন। এটি প্রয়োজনীয় সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করুন যেমন শিক্ষার্থীর পূর্ণ নাম, শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন নম্বর (১৭ অঙ্কের), অভিভাবকের পূর্ণ নাম, শিক্ষার্থীর জন্ম তারিখ, জেন্ডার, স্থায়ী ঠিকান, যোগাযোগের তথ্য, মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল অ্যাড্রেস। তারপর পাসওয়ার্ড ও পাসওয়ার্ড নিশ্চিতকরণ বাক্স দুটি পূরণ করুন। সবগুলো তথ্য ঠিকভাবে লেখা হয়ে গেলে I’m not a robot অপশনে চাপ দিন। এবার “নিবন্ধন করুন” অপশনে চাপ দিন।

ধাপ-৩ঃ মোবাইল ভেরিফিকেশন
পরবর্তী ধাপে, আপনার পরিচয় যাচাই করা হবে। আপনি প্রথম ধাপে বর্ণিত নিবন্ধন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে শেষ করে থাকলে, OTP এর মাধ্যমে আপনার প্রদত্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হবে। আপনার প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে একটি OTP কোড প্রেরণ করা হবে। কোডটি পেতে ২ থেকে ৩ মিনিট সময় লাগতে পারে। কোডটি পাওয়ার পর নির্ধারিত ঘরে তা লিখুন এবং আমি রোবট নই লেখার পাশের খালি বাক্সে চাপ দিন। তারপর ‘জমা দিন’ অপশনে চাপ দিন।

ধাপ-৪ঃ লগ ইন
এবার আপনাকে লগ ইন করতে হবে। আপনি দেখতে পাবেন যে, লগ ইন লেখার নিচে দুইটি খালি ঘর রয়েছে। প্রথম ঘরে আপনার নিবন্ধন ফর্ম এ প্রদত্ত জন্ম নিবন্ধন নম্বর বা ইমেইল অ্যাড্রেস লিখুন। পরবর্তী ঘরে আগের পাসওয়ার্ডটি লিখুন। নির্ধারিত ঘর পূরণ করা হয়ে গেলে “প্রবেশ করুন” লেখার উপর চাপ দিন।

ধাপ-৫ঃ আবেদন ফর্মে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড
এ পর্যায়ে আপনি আপনার একাউন্টে সফলভাবে লগ ইন করতে পেরেছেন। এখন আপনাকে ‘আবেদন করুন’ লেখার উপর চাপ দিতে হবে। তাহলে একটি ফর্ম দেখতে পাবেন। এখানে নির্ধারিত স্থানে শিক্ষার্থীর ছবি,স্বাক্ষর, জন্ম নিবন্ধন সনদ ও অভিভাবকের জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি আপলোড করতে হবে। তারপর “সংরক্ষণ” লেখা বাটনে চাপ দিতে হবে।

ধাপ-৬ঃ আবেদন ফর্ম পূরণ
এবার আবেদন ফর্ম অন্যান্য তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। তথ্য পূরণ করার সময় দেখবেন যে, বিজ্ঞপ্তির নম্বর, শিক্ষার্থীর নাম ও জন্ম নিবন্ধন নম্বর আগে থেকেই ফর্মে দেয়া আছে। এরপর সাধারণ তথ্য অংশে শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর (যদি থাকে), মাতার নাম ও তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, পিতার নাম ও তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর , শিক্ষার্থীর জন্ম তারিখ, জেন্ডার, বিভাগ,জেলা,সিটি কর্পোরেশন /পৌরসভা / উপজেলা, ইউনিয়ন /ওয়ার্ড, গ্রামের নাম লিখে ফর্ম পূরণ করতে হবে।

অভিভাবকের তথ্য অংশে কোটা, অভিভাবকের পেশা, অভিভাবকের শিক্ষাগত যোগ্যতা, জমির পরিমাণ, বার্ষিক আয়, পরিবারের সদস্য সংখ্যা নির্বাচন করুন।
ভর্তি প্রতিষ্ঠানের তথ্য অংশে প্রতিষ্ঠানের বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সহ যাবতীয় ঘর পূরণ করুন।
এরপর ব্যাংক/ মোবাইক ব্যাংকিং একাউন্টের তথ্য দিন। ব্যাংকিং এর ধরন সাধারণ ব্যাংকিং নির্বাচন করলে হিসাবের ধরন (চলতি, সঞ্চয়ী, অন্যান্য যেকোনো একটি) , একাউন্টটি কার,ব্যাংকের নাম, শাখা, একাউন্টের নাম(ইংরেজিতে), একাউন্টের নম্বর, হিসাবধারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর লিখতে হবে।
আর ব্যাংকিং এর ধরন মোবাইল ব্যাংকিং হলে একাউন্ট কার, ব্যাংকের নাম, জেলা, শাখা, একাউন্ট এর নাম (ইংরেজিতে), নম্বর, হিসাবধারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর লিখুন। তারপর সবশেষে সংরক্ষণ লেখা অংশে চাপ দিন।
ধাপ-৭ তথ্য পরিবর্তন
আবেদন ফর্ম পূরণ করে সংরক্ষণ করার পর আপনি প্রদানকৃত সব তথ্য একত্রে দেখতে পাবেন। যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে ‘পরিবর্তন’ বাটনে চাপ দিয়ে ভুল তথ্য মুছে সঠিক তথ্য দিন। সব ঠিক থাকলে ‘প্রথম ধাপের চূড়ান্ত দাখিল’ লেখার উপর চাপ দিন
ধাপ-৮ সুপারিশ পত্র আপলোড
এরপরে একটি নির্ধারিত স্থানে আপনাকে আপনার প্রত্যয়ন পত্র বা সুপারিশ পত্র আপলোড করতে বলা হবে। তা করার পর সংরক্ষণ করুন।
ধাপ-৯ পিডিএফ ডাউনলোড
এসব কাজ করা শেষ হয়ে গেলে, “পিডিএফ ডাউনলোড করুন” অপশনে চাপ দিন। এরপরে পিডিএফটি সংরক্ষণ করে রাখুন।

FAQ- জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহ
উত্তরঃ ভর্তি সহায়তা প্রাপ্তির জন্য আবেদন করার পর যদি একজন শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়, সেক্ষেত্রে তাকে মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হয়ে থাকে। এরপর ৪ থেকে ৬ মাস পর নির্ধারিত অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে।
শেষ কথা
মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এর অধীন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করণে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। উপরে উল্লেখিত প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে আবেদন করার পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই অনলাইনে এই উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আশা করি, লেখাটি যেভাবে সাজানো হয়েছে সেটি আপনার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।